আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কথায় আছে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনেই একজন শক্তিশালী নারীর হাত থাকে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কিও ব্যতিক্রম নন। বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যেভাবে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে না যাওয়ার শপথ নিয়েছেন, তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে গোটা দুনিয়া।
প্রথম জীবনে কমেডিকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়া থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসা, সবক্ষেত্রেই পাশে পেয়েছেন স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কাকে।
এক সময় নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি পর্দার আড়ালেই থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বামীকে শক্তি জোগাতে হাতে অস্ত্র তুলে নিতেও রাজি হয়েছেন ওলেনা জেলেনস্কা। রাশিয়ার করা তালিকায় এক নম্বরেই রয়েছেন ভলোদোমির জেলেনস্কি। তারপরেই তালিকায় রয়েছেন ওলেনা জেলেনস্কার নাম, এমনটাই জানা গেছে। তবে হুমকিতেও ভয় পাচ্ছেন না ওলেনা, বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বিপুল জনপ্রিয়তাকেই কাজে লাগিয়ে দেশের হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে ২১ লাখেরও বেশি ফলোয়ার্স রয়েছে ওলেনার। ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পাওয়ার পর সামাজিক কাজের পোস্ট করলেও, তার মাঝেই ফাঁকফোকরে জায়গা করে নিত স্বামী বা সন্তানদের সঙ্গে ছবি। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই দেশের সঙ্গে সঙ্গে ওলেনার ইন্সটা প্রোফাইলও রূপ বদলেছে। সেখানে স্থান পেয়েছে মানবতার বার্তা বা যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র। সেখানে তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফার্স্ট লেডিদেরও ‘সত্যি’ তুলে ধরার অনুরোধ করেছেন। সামরিক অভিযানের নামে রাশিয়া যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করেছে, তাও দাবি করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যেমন টুইটারের মাধ্যমে নিজের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরছেন, একইভাবে তার স্ত্রীও সোশ্যাল মিডিয়াকেই ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে রুশ আগ্রাসন ও যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে তুলে ধরছেন। এই মিল কিন্তু নতুন নয়, তাদের সম্পর্কের ভিতই গড়ে উঠেছে নিজেদের একই ধরনের পছন্দ ও মিলের উপর ভিত্তি করে।
একসঙ্গে পড়াশোনা করেছিলেন ভলোদিমির ও ওলেনা। কর্মজীবনে প্রবেশের পরও কোনোদিন জেলেনস্কির পাশ থেকে সরে দাঁড়াননি ওলেনা। তার স্বামী যখন টিভিতে নিজেকে কমেডিয়ান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময়ই তিনি পর্দার আড়াল থেকে স্বামীকে কাজে সাহায্য করছিলেন। স্টুডিয়ো কোয়াটের ৯৫ নামক যে প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেছিলেন জেলেনস্কি, সেখানে কী কী অনুষ্ঠান হতে পারে, তার পরিকল্পনা থেকে স্ক্রিপ্টরাইটার লেখার দায়িত্বও সামলেছেন ওলেনা।
লেখালেখি শুরুর আগে ওলেনা স্থাপত্য (আর্কিটেকচার) নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানেই আইনের ছাত্র জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। ২০০৩ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তানও রয়েছে, সাশা ও সিরিল।
জেলেনস্কি যখন প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সময় তিনি স্ত্রীকেও জানাননি। ১ জানুয়ারি টিভি শোতে ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই তিনি জানতে পেরেছিলেন। সেই সময় তিনি যখন জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কেন তাকে জানাননি, জেলেনস্কি উত্তর দিয়েছিলেন ‘আমি ভুলে গিয়েছিলাম’।
স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করলেও, ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য, নারীদের সমান অধিকার থেকে সাংস্কৃতিক কূটনীতির ওপরই জোর দিয়েছিলেন। স্কুলে শিশুদের খাবারের পরিবর্তন তাকে সংবাদের শিরোনামে এনে দিয়েছিল।প্যারা অলিম্পিক প্রতিযোগীদের সাহায্য থেকে শুরু করে ইউক্রেনের পরিকাঠামোর পরিবর্তন এনেছেন তিনি।